۵ آذر ۱۴۰۳ |۲۳ جمادی‌الاول ۱۴۴۶ | Nov 25, 2024
হযরত আলী (আ.) এর গুণাবলী
হযরত আলী (আ.) এর গুণাবলী

হাওজা / যদি হযরত আলীকে আমাদের আদর্শ ও নেতা হিসেবে গ্রহণ করি, তবে একজন পূর্ণ ও ভারসাম্যপূর্ণ মানুষকে যার মধ্যে সকল মানবিক মূল্যবোধ সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বিকাশ লাভ করেছে আমাদের অগ্রগামী হিসেবে গ্রহণ করেছি।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, যদি হযরত আলীকে আমাদের আদর্শ ও নেতা হিসেবে গ্রহণ করি, তবে একজন পূর্ণ ও ভারসাম্যপূর্ণ মানুষকে যার মধ্যে সকল মানবিক মূল্যবোধ সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বিকাশ লাভ করেছে আমাদের অগ্রগামী হিসেবে গ্রহণ করেছি।

যখন রাত্রি নেমে আসে,রাত্রির নিস্তব্ধতা চারিদিক আচ্ছন্ন করে ফেলে তখন কোন সাধক বা আরেফই আলী (আ.)-এর পদমর্যাদায় পৌছতে পারে না। এমন প্রাণবন্ত ইবাদত যেন স্রষ্টার সাধনায় নিমগ্ন ও পরমাকৃষ্ট,তার দিকে ধাবমান প্রবলভাবে। আবার যখন তিনি অন্য কোন বিষয়ে মশগুল,উদাহরণস্বরূপ যখন তিনি যুদ্ধ ও সংগ্রামে লিপ্ত (যুদ্ধক্ষেত্রে) তরবারীর আঘাতে তার দেহ ক্ষত-বিক্ষত,শরীর থেকে মাংস বিচ্ছিন্ন হয়ে এক দিকে পড়ে গেছে,কিন্তু এতটা নিমগ্ন যে,অনুভব করেন নি একটুকরা মাংস তার দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। গভীর মনসংযোগের কারণে সে দিকে লক্ষ্যই নেই। আলী ইবাদতের সময় এতটা উষ্ণ হয়ে উঠেন যে,আল্লাহর প্রেম ও ভালোবাসায় তার অস্তিত্ব যেন এক প্রজ্বলিত শিখা যার অবস্থান এ পৃথিবীতে নয়। নিজেই এক দল ব্যক্তিকে এভাবে বর্ণনা করেছেন,

“জ্ঞান তাদের দিকে তার দিব্যতাসহ প্রকৃতরূপে ধাবিত হয়েছে,ইয়াকীনের প্রাণকে তারা কর্মে নিয়োজিত করেছে,যা দুনিয়াদারদের জন্য কঠিন ও অসহ্য তা তাদের নিকট সহজ হয়ে গেছে,জাহেলরা যা থেকে ভীত তারা তার প্রতি আকৃষ্ট,যদিও তারা মানুষের মাঝে শারীরিকভাবে অবস্থান করছে তদুপরি তাদের আত্মা উচ্চতর এক স্থানে সংযুক্ত।” (নাহজুল বালাগাহ্,হেকমত ১৩৯)

ইবাদতরত অবস্থায় তার দেহ থেকে তীর খুলে ফেলা হয়েছে,অথচ তিনি এমনভাবে আল্লাহর প্রতি আকৃষ্ট ও ইবাদতে নিমগ্ন যে অনুভবও করেননি। ইবাদতের মেহরাবে তিনি এতটা ক্রন্দনশীল যার নজীর কেউ দেখেনি। আবার দিনের বেলায় আলী যেন ভিন্ন কোন মানুষ। সঙ্গীদের সাথে যখন বসেন তখন হাসি মুখ,খোলা-মেলা তার আচরণ। তার চেহারা সব সময় হাস্যোজ্জ্বল। আলী (আ.) এত বেশি মুক্ত মনের ছিলেন যে,আমর ইবনে আস আলীর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতো যে,আলী খেলাফতের উপযুক্ত নয়। কারণ হাসিমুখ ও মনখোলা মানুষ খেলাফতের জন্য অনুপযোগী।

খেলাফতের জন্য কঠিন মুখাবয়বের প্রয়োজন যাতে মানুষ তাকে ভয় পায়। এটা নাহজুল বালাগায় আলী নিজেই বর্ণনা করেছেন-

“ নাবেগার সন্তানের কথায় আশ্চর্যান্বিত হই যে বলে,আলী মানুষের সাথে হাসি মুখে কথা বলে,খুবহাসি-ঠাট্টা করে,মজাদার লোক।”

যখন আলী শত্রুর সাথে যুদ্ধের ময়দানে একজন যোদ্ধার বেশে আবির্ভূত তখনও তিনি মন খোলা ও হাসি মুখ। কবি বলছেন,

“ তিনি ইবাদতের মেহরাবে যেমন অত্যন্ত ক্রন্দনশীল তেমনি যুদ্ধের ময়দানে হাস্যোজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত।”

তিনি কেমন মানুষ? এটাই কোরআনী মানুষ। কোরআন এমন মানুষই চায়।

“নিশ্চয় (ইবাদতের উদ্দেশ্যে) রাত্রিকালের উত্থান আত্মশুদ্ধির জন্য সর্বাধিক কঠিন পন্থা এবং বাক্যালাপে সর্বাধিক দৃঢ়তা দানকারী। নিশ্চয় দিবসে তুমি দীর্ঘ কর্ম ব্যস্ততায় নিমগ্ন থাক।” অর্থাৎ রাতকে ইবাদতের জন্য রাখ আর দিনকে সামাজিক কাজকর্মের জন্য। আলী যেন রাত্রিতে এক ব্যক্তিত্ব,আর দিনে অন্য এক ব্যক্তিত্ব।

হাফেজ শিরাজী যেহেতু একজন মুফাস্সির ছিলেন সেহেতু কোরআনের রহস্যকে বেশ ভালোভাবেই উপলব্ধি করতেন। নিজস্ব ভঙ্গিতে ভাষার গাঁথুনীতে এ বিষয়টি তিনি কবিতায় এনেছেন-

“দিনে রত হও অর্জনের চেষ্টায়

রাত তো সময় মাতাল হওয়ার শরাবের নেশায়।

হৃদয়রূপ আয়নায় মরিচা তো পড়বেই

মরিচা সরানোর সময় তো রাতের আঁধারেই।”

আলী (আ.)-এর দিবারাত্রি এমনই ছিল। বিপরীত চরিত্রের সমন্বয়-যা পূর্ণ মানবের জন্য প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য তা হাজার বছর পূর্বের আলীর মধ্যে দেখা যায়। সাইয়্যেদ রাজী নাহজুল বালাগার ভূমিকায় বলছেন,“ যে বিষয়টি সব সময় বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করি এবং যাতে সবচেয়ে বেশি আশ্চর্যান্বিত হই তা হলো আলী (আ.)-এর বক্তব্যগুলোর যে কোন একটিতে প্রবেশ করলে মনে হয় যেন এক বিশ্বে প্রবেশ করেছি। কখনো কোন আবেদের জগতে,কখনো বা যাহেদের জগতে,কখনো দর্শনের জগতে,কখনো আধ্যাত্মিকতার জগতে,কখনো সৈনিক বা সামরিক কর্মকর্তার জগতে,কখনো ন্যায়পরায়ণ বিচারক বা শাসকের বা ধর্মীয় নেতার জগতে। সকল বিশ্বেই আলীর উপস্থিত। মানব বিশ্বের কোন স্থানেই আলী অনুপস্থিত নন।”

সাফিউদ্দিন হিল্লী যিনি অষ্টম হিজরী শতাব্দীর একজন কবি ছিলেন তিনি বলেছেন,

“ বিপরীত বৈশিষ্ট্য হয়েছে তোমায় সমন্বিত

তাই তুমি হয়েছ মহিমান্বিত।”

“আত্মসংযমী শাসক তুমি,সহনশীল বীর

ফকির তুমি,দুনিয়াত্যাগী পীর।”

যেমন সহনশীলতা ও ধৈর্যের ক্ষেত্রে তুমি সর্বোচ্চ পর্যায়ে তেমনি সাহসিকতার ক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ পর্যায়ে। রক্তপাতের ক্ষেত্রে যেখানে কোন নিকৃষ্ট ব্যক্তির রক্ত ঝরাতে হবে সেখানে শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা,আবার ইবাদতের ক্ষেত্রে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদতকারী। নিঃস্ব ও সম্পদহীন তিনি,অথচ সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা। দানশীল ছিলেন বলেই সম্পদ তার হাতে গচ্ছিত থাকত না।

“ দাতা কভু পারে না সম্পদ সঞ্চয় করতে

প্রেমিক অন্তর পারে না কভু ধৈর্য ধরতে,

পানিরে পারা যায় না কভু ছাকনিতে আটকাতে।”

তেমনি আলী (আ.)-কে বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে-

কোথাও তোমার চরিত্র এমন যে,তোমার কোমলতা দেখে মৃদুমন্দ বাতাসও লজ্জা পায় কখনো তোমার দৃঢ়তা পাথরকেও হার মানায়। ”

অর্থাৎ সাহসিকতা,শৌর্য আর সংগ্রামী তার আত্মার মোকাবিলায় পাথর,শীলা বা ধাতুও গলে যায়। আবার তার চারিত্রিক কোমলতাই মৃদমন্দ বাতাসকেও লজ্জা দেয়। একই ব্যক্তির মধ্যে কোমলতা ও কঠোরতার এক অপূর্ব সমন্বয়। তুমি কেমন আশ্চর্য সৃষ্টি?

অতএব,পূর্ণ মানব অর্থ সেই মানুষ যিনি সকল মানবিক মূল্যবোধে বলীয়ান। মানবতার সকল ময়দানে তিনি শ্রেষ্ঠ। এখান থেকে আমরা কি শিক্ষাগ্রহণ করব? এ শিক্ষাগ্রহণ করব যে,ভুল করে শুধু একটি মূল্যবোধকে গ্রহণ করে অন্যান্য মূল্যবোধকে যেন আমরা ভুলে না যাই। যদিও আমরা সকল মূল্যবোধের ক্ষেত্রেই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারব না,কিন্তু নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত সকল মূল্যবোধই একত্রে ধারণ তো করতে পারি। যদি পূর্ণ মানুষ নাও হই অন্তত ভারসাম্যপূর্ণ মানুষ তো হতে পারি। আর তখনই একজন প্রকৃত মুসলমান হিসেবে সকল ময়দানে আমরা উপস্থিত হতে পারব। সুতরাং এটাই পূর্ণ মানুষের রূপ।

تبصرہ ارسال

You are replying to: .